Bangla Goddo Kobita Dipankar Das এর লেখা পাঁচটি বাংলা গদ্য় কবিতা

Bangla Goddo Kobita Dipankar Das এর লেখা পাঁচটি বাংলা গদ্য় কবিতা

bangla goddo kobita

প্রথম গদ্য় কবিতা

|| ঠিক তারপরেই ||

ঠিক তারপরই মেঝেতে সাদা থকথকে মনখারাপ গুলো ফেলতে ফেলতে একরাশ মাথাব্যথা আবার জমাট বাঁধতে থাকে। শিরদাঁড়াটা এক শিহরণ জাগানো অনুভূতিতে কেঁপে উঠতেই মনে হয় ঘড়ির কাঁটাটা কে যেন চেপে একপলকের জন্য থামিয়ে রেখেছে।
কি পেরেছি এ জীবনে?
অলসতা ব্যাগ ভর্তি করে দিন কাটিয়েছি, ভোরের বেলা ঘুমোতে গেছি আর দুপুর বেলা ঘুম থেকে উঠেছি ব্যাস।
খাওয়ার টেবিলে একগাল মোহ, আবেগ,উৎকন্ঠা,ক্রোধ,ভয়,হিংসা,ব্যর্থতা মিশিয়ে এক ভিন্ন স্বাদের খিচুড়ি পাত পেড়ে খেয়েছি।
ভালোবাসা?
“ভালোবাসা” কথাটা শুনলে আঁতকে উঠি,কেমন একটা ভয়ে কেন্নোর মতো নিজেকে গুটিয়ে নি।
বুকের বাম পাশের ধুকপুকানিটা বাড়তে থাকে,নিমেষের মধ্যে যন্ত্রনাগুলো হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করতে করতে কষ্টগুলোর পেরেক পুঁতে দেয় একের পর এক।
নাম না জানা পাগলামিটাও বেড়ে যায়, ক্ষ্যাপাটে ষাঁড়ের মতো দিকভ্রান্ত হয়ে ছুটে বেড়াই, মুখে বালিশ চেপে চিৎকারে গলা ফাটাই,হাসতে হাসতে নিজের উপর ঘেন্না গুলো জমিয়ে রাখি।
কান্না?
সে নিজের চোখে নিজেকে কাঁদতে দেখিনি কখনো।
হয়তো মনখারাপ গুলোর সাথে কান্না মিশে, জলে ধুয়ে, ড্রেনের জলে মিশে গেছে।
কিন্তু চিটচিটে আঠালো ভাবটা যে চোখের কোণে তো লেগেই থাকে, ঠিক তারপরেই….।।

 

দ্বিতীয় গদ্য় কবিতা

|| চ্যালেঞ্জ ||

 

পাথর ফেটে বরফ গলে,
জল থৈ থৈ। এখনো পড়েনি উপচে..
মনখারাপের আস্তাবলে-
অবসাদ লুকিয়ে। আনাচেকানাচে..
এক পৃথিবী ব্যর্থতা নিয়ে, আত্মহননে যায় এগিয়ে
পরিসংখ্যান শুনে মাথায় বাজ, আত্মহত্যায় যুবসমাজ।
জীবনের মর্ম কেউ কি বোঝেনা? স্ট্রেঞ্জ..
ঘুরে দাঁড়ানোটাই যে আসল চ্যালেঞ্জ।

 

তৃতীয় গদ্য় কবিতা

 

||পরিবেশক||

যদি কোনো এক অনুষ্ঠানে, ধরে নে তোর বান্ধবীর বান্ধবী র বিয়েতে তুই আমন্ত্রিত। আমি হয়তো সেই অনুষ্ঠানে খাবার পরিবেশনার দায়িত্বে থাকবো। তুই খেতে বসার সময় আমাদের চোখাচোখি হ’লেও তুই দেখে না দেখার ভান করে সামনের চেয়ারটি সরিয়ে ভিতরের চেয়ার টাতে বসবি আর তোর সেই সামনের চেয়ারে বসে তোর সাথে গল্পে মেতে থাকবে তোর বর।তোর সিঁথিতে লাল রঙটা চোখে পড়তেই, শরীরটা কেঁপে উঠবে, কান্না পাবে, বাঁধ ভাঙতে চাইবে কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে আমি খাবার পরিবেশনে এগিয়ে যাবো।তোর টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চানামশলার ঝোলে সাঁতার কাটতে থাকবো, রাধাবল্লভী দেওয়া দেওয়া শেষ করে অন্য পরিবেশক বন্ধু বলে উঠবে ভাই এবার চানা মশালা টা দে, কি ভাবছিস এতো।হটাত ঘোর কাটিয়ে, কাঁপতে থাকা হাত দিয়ে দিতে গিয়ে, ঝোল তোর গায়ে পড়লে তোর বর ফুলঝুরির মতো মিষ্টি শব্দে তীব্র বাক্যবাণ ছুড়তে থাকবে।
গরম রাধাবল্লভী গুলো তোর নরম আঙুলে ছ্যাঁকা দিলে তুই ফুঁ দিতে থাকবি, তক্ষুনি তোর বর আরএকটু তীব্র গতিতে ফুঁ চালিয়ে, নিজের হাতে রাধাবল্লবী গুলো ছিড়ে খাইয়ে দেবে।
পাশের টেবিলে বসে থাকা যুবক ছেলেটিও সেই দেখে তোর দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে কিছুক্ষন মিচকি হেসে নেবে, হয়তো তার ও কোনোও পুরোনো স্মৃতি মনে পড়ে যাবে ঠিক সেইসময়।
কোনো এক দিন কোনো এক অনুষ্ঠানে হয়তো তার এক তরফা প্রেমিকাকে, তার প্রেমিক এইভাবেই খাইয়ে দিয়েছিল।
খেতে বসে শুনতে পেয়েছিল বন্ধু মহল থেকে তার সিঙ্গেল থাকার জন্য বিদ্রুপ, হাসা হাসি তো ছিলোই আর করবেও।
তার প্রেমে ব্যর্থতার কথাগুলো ভালো ক’রে কানের কুঠুরির ভেতরে ঠেলে ঠেলে ঢোকানো হবে। ছেলেটি মেয়েটির দিকে বার কয়েক তাকিয়ে মুখ নীচু করে নেবে।
আর মস্তিষ্কের পর্দায় ভেসে উঠবে “প্রেম ক’রে দেখাতে না পারাটা তার অক্ষমতা না সক্ষমতা”, এই নিয়ে চলবে ঘন্টাখানেক সঙ্গে অমুক ডিবেট । সেই টিভি কিচ্ছুক্ষণ এর জন্যে বন্ধ রেখে, বন্ধু বান্ধবের খিল্লিতে কর্নপাত না করে, সে হয়তো বিরিয়ানি আর লেগপিসটার ওপর বিশেষভাবে আলোকপাত করবে।পুরোটা হজম করে, হাল্কা ঢেকুর তুলে আমার মতো কোনও এক খাবার পরিবেষক কে বলে উঠবে আর দুটো লেগপিস আর রাইস দিয়ে যান দেখি…

চতুর্থ গদ্য কবিতা

|| কেউ মনে রাখেনি? ||

সন্ধে সাড়ে ছটা নাগাদ খিদে বিপদসীমা অতিক্রম করলে এদিক ওদিক থেকে খুচরো কয়েন দশ বারো টাকা সঙ্গী করে বেরিয়ে পড়লাম একটা ছাতা মাথায় দিয়ে। বাইরে তখন টেস্ট খেলার মতো বৃষ্টিটা সকাল থেকে তখন ও ব্যাটিং করে চলেছে। যাই হোক হ্যাফ প্যান্ট আর হাওয়াই চটি পরে অগত্যা ছাতা নিয়ে বেরোনো।
এই বাজারে যে পাঁচ টাকায় মুড়িমাখা দিচ্ছে তা আমার মতো বেকার ছেলেমেয়েদের কাছে সন্ধ্যার খাবার হিসাবে অমৃত।
যাই হোক দোকান থেকে মুড়ির ঠোঙাটা নিয়ে মেন রোডের পাশের গলি দিয়ে ঢুকেছি ওই রাস্তা দিয়ে যাব বলে, ওটাই গোসাই কাকার চায়ের দোকানের শর্টকাট আর কি। মুড়ি চিবোতে চিবোতে ফিরছি দুটো গলি ছেড়ে পরের গলিতে ঢুকতে যাব, একটা ছেলে ও মেয়ে প্রায় আমার বয়সী বা ছোট কিংবা বড় কিছু একটা হবে, আমার পাশ থেকে দুজন দুজনের হাত ধরে হেটে বেরিয়ে গেলো, হাত দুটো যেন ফেবিকল আঠা দিয়ে লাগানো বৃষ্টির জলেও খুলবে না। শুধু যেতে যেতে তাদের এটুকুই কথা কানে আসলো-
“বাবু তুমি কিন্তু আজ পাক্কা বারোটার সময় ফোন করে আমার বার্থডের ফার্স্ট উইশ টা করবে কেমন… ”
ছেলেটি বলল – “আমি ছাড়া আমার সোনাকে কেউ উইশ করবেই না আগে আমি করব তারপর…”
কথাগুলো শুনে কিছুটা বিষম খেলাম তারপর মনে মনে খ্যাঁক খ্যাঁক করে দাঁত কেলাতে কেলাতে গোসাই কাকার দোকানের দিকে গেলাম।দোকানে বসে চা আর বিড়িতে সুখটান দিয়ে বাড়ি ফিরলাম..
বাড়িতে এসে লিখতে বসলাম। কি লিখব?
পেট ভাত না থাকলে লেখা ফেকা আসে না..
না আসে না…
ও ওদের কথা শুনে হাসলাম কেন? হ্যাঁ বলছি, বলছি অপেক্ষা করুন..
ধরুন যারা আপনার মুখ দেখেনি সারাবছর তারাও আপনার জম্মদিনের দিন ফেসবুকের নোটিফিকেশন দেখে একদিনের আদিখ্যেতা দেখাবে তাইনা…
তারপর আপনার ওয়াল জুড়ে চলবে সংবর্ধনা দেওয়ার পালা, আপনি ভেবে নেবেন নোবেল টোবেল পেয়েছেন হয়তো..আর গোঁফের তলায় একটু মৃদু হেসে ভাববেন.. যাক আমাকে সবাই মনে রেখেছে তবে.. বা* মনে রেখেছে..
তখন একটু ছেলিব্রিটি ছেলিব্রিটি মনে হবে আপনার নিজেকে..
আর যারা আমাদের মতো বয়সী প্রেমিক যুগল,
তারা যতক্ষন প্রেমিক প্রেমকা ততদিন জম্মদিনে রাত বারোটায় ফোন করে শুভেচ্ছা জানাবে,
যেই ব্রেকাপ!! ব্যাস জম্মদিনটিন ভুলে.. আপনার জম্মদিনের ডেট টি গুলে খেয়ে আপনার মুখে মুতে দেবে.. সরি ভদ্র ভাষায় হিসি করে দেবে আর কি.. মানে ভুলে যাবে.. হ্যাঁ ভুলেই যাবে।
বিশ্বাস হচ্ছেনা?
আচ্ছা আমার মতো ফেসবুকে বার্থডে টা অনলি মি করে রাখুন, একদিন ঠিক বুঝে যাবেন..
সত্যিই কেউ মনে রাখেনি, কেউ মনে রাখেনা।
আই রিপিট কেউ মনে রাখেনি, কেউ মনে রাখেনা, মা ছাড়া..।।

পঞ্চম গদ্য় কবিতা

||হেডফোন||

 

তোর জানলায় আঁচড়াতে আঁচড়াতে দাগ কেটেছি।
তুই শুনতে পাসনি…
গলা ফাটিয়ে চিৎকারে নিজের কানের পর্দা ফাটিয়েছি।
তুই শুনতে পাসনি…
ভিজে স্বপ্নে তোকে কতবার পিছনে ডেকেছি।
তুই শুনতে পাসনি…
টাটকা টাটকা রক্তে তোর কত ছবি এঁকেছি।
তুই শুনতে পাসনি..
তুই শুনতে পাসনি,তুই শুনতে পাসনা,কান্না।
তুই শুনতে পাসনি,তুই শুনতে পাসনা,বেদনা।
তুই শুনতে পাসনি,তুই শুনতে পাসনা,যন্ত্রণা।
তুই শুনতে পাসনি,তুই শুনতে পাসনা,থাক!
আর না।
তোর কানে ওটা কি,হেডফোন না?

 

এই পাঁচটি বাংলা গদ্য় কবিতা Bangla Goddo Kobita যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তবে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে একদম ভুলবেন না। ধন্যবাদ।

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল – Bengalicaptions

আরো কিছু দুই লাইনের কবিতা – কাব্যিক ক্যাপশন

আরো কিছু দুই লাইনের কবিতা